পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার তিনের এক ভাগও এখন পর্যন্ত আবাদ হয়নি। ফলে এ বছর একদিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ধস নামতে পারে উৎপাদনও। স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, এবার উপজেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ১৬০ হেক্টর। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে।
অথচ গতবছর উপজেলায় ২৯ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছিল। এ হিসেব অনুযায়ী-গতবছরের আবাদ এবং এবারের লক্ষ্যমাত্রার এক তৃতীয়াংশের কম আমন চাষাবাদ হয়েছে চলতি মৌসুমে। ফলে উৎপাদনে ধস নামতে পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জুলাইয়ের শেষ দিকে আমন মৌসুম শুরু হয় এবং শেষ হয় সেপ্টেম্বরে। এরমধ্যে বীজতলা তৈরির সময় থাকে এক মাস। পরে ধানের চারা রোপনের পালা। তাই এখনও চাষাবাদের কিছুটা সময় হাতে আছে।
তবুও শঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলেন, গতবছরের চেয়ে এবার চাষাবাদ কমতে পারে। টানা বৃষ্টি এবং ফসলি মাঠে জলাবদ্ধতার কারণে বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, প্রায় এক মাস ধরে কয়েক দফার বৃষ্টিতে কৃষি জমিতে পানি জমে আছে। একারণে কোন কোন কৃষকের বীজতলা পচে গেছে। আবার কোন কৃষকের মাঠ পানিতে নিমজ্জিত থাকায় চারা রোপন করতেই পারছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে উপজেলার বেশিরভাগ ফসলি মাঠের বীজতলা পানিতে ডুবে রয়েছে। চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। ইতোমধ্যে যেসব মাঠে চারা রোপন করা হয়েছে, তাও তলিয়ে আছে পানিতে।
উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের উত্তর চরমোন্তাজ গ্রামের কৃষক নাসির মুন্সি বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে বৃষ্টি। ফসলের মাঠ তলিয়ে আছে। বীজতলা করেছি। কিন্তু চারা রোপন করতে পারছি না। পানিতে বীজ ডুবে থাকলেতো বীজ পচে যাবে। নতুন করে বীজ করারও সময় নাই।’
একই ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ গ্রামের কৃষক ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘চারা লাগানোর সময় চলে যাচ্ছে। কিন্তু মাঠ পানিতে তলিয়ে আছে। এরকম পানি থাকলেতো চারা লাগাতেই পারবো না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কৃষক জানান, ¯øুইসগেট এবং কালভার্টগুলো ঠিকমত খুলে রাখা হলে ফসলের মাঠে এত পানি জমে থাকতো না।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের দুই হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। ইতোমধ্যে ৫ শতাংশ বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। এখন যে অবস্থা-তাতে দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকতে পারে। কিন্তু ফসলি মাঠ থেকে পানি যদি না কমে এবং বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে-সেক্ষেত্রে অনাবাদি জমির পরিমাণ আরও বাড়বে। আর চাষাবাদ কম হলে উৎপাদনও কমবে।’