দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত। বালুচরে লাল কাঁকড়াদের ছোটাছুটি। ঢেউয়ের গর্জন। বাতাসের তালে ঝাউপাতার শো শো শব্দে এক অন্যরকম অনুভূতি। সমুদ্রতটে চিকচিকে বালুতে পা ফেলানো আর হঠাৎ সমুদ্রের জলরাশি ঢেউ এসে ছুঁয়ে যাওয়া। সাজ বেলায় পূর্বাকাশে সমুদ্রের বুক চিরে জেগে ওঠা লাল সূর্যটা বেলা শেষে পশ্চিম আকাশে হেলে পরার মতো দৃশ্য যেকোন জায়গায় দাঁড়িয়ে অবলোকন করা যায়। ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে এ স্থানটি অতুলনীয়।
বলছিলাম পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার সম্ভবনাময় পর্যটককেন্দ্র জাহাজমারা ও তুফানিয়ার কথা ।
জাহাজমারা থেকে তুফানিয়া
নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ঘেরা এ স্থানের নাম ‘জাহাজমারা’ সৈকত। এটি সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। সম্ভাবনাময় এ পর্যটন স্থানটি দিনদিন পর্যটকদের ভীর জমতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকদের সমাগমে ভরে ওঠে এ সৈকতটি।
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের যেকোন জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ রয়েছে । ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকা জেলে নৌকার বহর। রয়েছে সমুদ্র উপভোগের সুযোগ। এখানে এসে গঙ্গাসানে রয়েছে ভিন্ন আমেজ। এখানে গেলে দেখা মিলবে হাজারো জেলের। সাগর থেকে তুলে আনা টাটকা মাছের স্বাদও নেয়া যাবে এখান থেকে। সাগরে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। সৌন্দর্য্য পিপাসুদের অনেকেই জাহাজমারা দেখে মুগ্ধ।
খোকন ভূইয়া নামে স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, 'প্রায় প্রতি বছরই এখানে বৌদ্ধ পূর্ণিমায় হাজার হাজার লোকের আগমন ঘটে এখানে নানা আয়োজনে পালিত বৌদ্ধধর্মালম্বীদের সে বিশেষ দিন। এছাড়া ছুটির দিনে বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের এখানে ভ্রমন করতে দেখা যায়।’
দূর থেকে সমুদ্র সৈকতের বীচে তাকালেই লাল কাঁকড়ার চোখে পড়বে। দেখলে মনে হবে যেন লাল চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের কাছে এ দৃশ্য আনন্দদায়ক। এছাড়া জাহাজমারা আরেকটি ছোট দ্বীপ। চারদিকে নদী আর মাঝখানে দাড়িয়ে থাকা সবুজবনা লে সৃষ্টি এ দ্বীপের নাম তুফানিয়ারচর। জাহাজমারা থেকে তুফানিয়ারচরে যেতে ২০ মিনিট সময়ের ব্যবধান। শীত মৌসুমে অতিথি পাখিদের দেখা মিলবে এখানে। এখানে রয়েছে প্রায় ৪ কিলোমিটার সমুদ্রতট ঘীরে রয়েছে বিশাল ঝাউবাগান। তাই অপার সম্ভাবনাময় এই স্থানটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
এখানে বেড়াতে আসা এক দর্শনার্থীর সাথে আলাপকালে বলেন, ‘আজ পরিবারের সবাই বেড়াতে এসেছি। খুব ভালো লাগলো। তবে এখানে থাকার খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো হতো।’
এখানে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী শতরুপা বলেন, ‘জাহাজমারা আমার কাছে খুবই পছন্দের একটি জায়গা। তবে এখানে হোটেল- মোটেল না থাকায় রাত্রি যাপনের কোন সুযোগ নেই, ছুটির দিনে এখানে প্রায়ই এসে থাকি রাত্রিকালীন সময় এখানে কাটাতে পারলে রাতের সমুদ্র সৈকত ও ভিন্নভাবে উপভোগ করা যেত।’
তুফানিয়া যেতে যা দেখবেন
জাহাজমারা স্লুইসগেট থেকে ছোটখালের মধ্য দিয়ে ছোট ট্রলারযোগে তুফানিয়ার চরে যেতে হবে। যেতে যেতে খালের দুপাশে দেখা মিলবে নানা ধরনের পাখ-পাখালি আর বন্য প্রাণীর সাথে। পাতি তিসাবাজ, সাদা কলার্ড মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদাবক, খেকশিয়ালসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী। সাদাবক, জলকবুতরে সাজিয়ে আছে তুফানিয়ার সমুদ্র সৈকত । এছাড়াও বনের মধ্যে নানা ধরনে পাখির কলকাকলতি সরব হয়ে ওঠে তুফানিয়াচরের ঝাউবাগান।
যেভাবে যেতে হবে
জাহাজমারা যাতায়াতের একাধিক পথ রয়েছে। সন্ধ্যা ৬ টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে একটি লঞ্চ রাঙ্গাবালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। ওইসব লঞ্চে ডেকের ভাড়া ৫০০-৬০০ টাকা। সিগন্যাল কেবিন ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা এবং ডাবোল কেবিন ভাড়া ১৮০০-২০০০ টাকা। এছাড়া ভিআইপি কেবিনও রয়েছে লঞ্চে। ঢাকা সন্ধ্যা ৬ টায় লঞ্চে যাত্রা শুরু করলে পরদিন সকাল ৭টায় কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট পৌঁছে যাবেন। ওইখান থেকে মটর সাইকেল যোগে ২০ মিনিটের মধ্যে রাঙ্গাবালী খালগোড়া বাজার খেয়াঘাট যাবেন।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
উপজেলা সদর রাঙ্গাবালীতে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোসহ আবাসিক হোটেল রয়েছে। আছে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও। এখান থেকে সকালে জাহাজমারা গিয়ে দিনব্যাপী হৈ-হুল্লোরে কাটিয়ে সন্ধ্যে বেলা ফিরে আসা যায় উপজেলা সদরে।