জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-এই তিন মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। সেই মৌসুমও এখন শেষ দিকে। একদিকে কাঙ্খিত মাছ ধরা পড়ছে না। অন্যদিকে পুরো মৌসুমজুড়ে এবার সাগরের বৈরী আচরণ গত দুই মাসে ৬ দফায় কখনো লঘুচাপ, কখনো নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাই যাত্রা করে গিয়ে জাল ফেলতে না ফেলতেই উত্তাল হয়ে ওঠা সাগর থেকে তীরে ফিরতে হয়েছে বারংবার। সামনে আসছে আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সবমিলিয়ে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপকূলের জেলেদের দিন কাটছে হতাশায়।
ইলিশের ভরা মৌসুম শেষ দিকে। কিন্তু জেলেদের মুখে হাঁসি নেই। ইলিশের আশায় সমুদ্রে গেলেও অন্যান্য মাছই ধরা পড়ছে বেশি। এতে শতকরা ৫-১০ জন লাভবান হলেও বেশিরভাগ জেলে ক্ষতিগ্রস্ত। কারও কারও সমুদ্রে যাওয়া-আসার খরচও উঠছে না।
জেলেদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকে ভাগ্যক্রমে কিছু জেলে লাভবান হয়েছেন। বেশিরভাগ জেলে এবার ক্ষতিগ্রস্ত। মৌসুমের শেষ দিকে এসেও আশানুরূপ মাছ জালে উঠছে না। বড় ইলিশ পরিমাণে কম। ছোট ইলিশ আর জাটকা মিলছে, তাও অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশি নয়। বেশিই ধরা পড়ছে পোমা,লইট্টা, তুলার ডাটি, রুপচাঁদাসহ সামুদ্রিক অন্যান্য মাছ। এতে লাভতো দূরের কথা, যাওয়া-আসার খরচও উঠছে না কারও কারও।
অন্যদিকে পুরো মৌসুমজুড়ে আবহাওয়া এবং সাগরের বৈরী আচরণ জেলেদের পক্ষে সায় দিচ্ছে না। গত দুই মাসে ৬ দফায় কখনো লঘুচাপ, কখনো নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। সবশেষে ২৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। জেলেরা বলছেন, গত ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকে দফায় দফায় সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। ফলে সাগরে যাত্রা করে গিয়ে জাল ফেলতে না ফেলতেই উত্তাল হয়ে ওঠা সাগর থেকে তীরে ফিরতে হয়েছে বারংবার। একারণে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
সাগর থেকে মাছ শিকার করে কোড়ালিয়া ঘাটে এসেছেন কাশেম হাওলাদার কথা হয় তার সাথে তিনি বলেন, সাগরে ঠিকভাবে মাছ ধরতে পারিনা কয়দিন পর পর আবহাওয়া খারাপ,এমনিতেই সাগরে ইলিশের কোনো দেখা নেই। তিনদিন পর ঘাটে আসছি মাছ বিক্রি হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতন। ট্রলার স্টাফদের বেতন আছেই ৪০ হাজার টাকা প্রায়। আসা যাওয়া খরচতো আছেই। ইলিশ তো পাই নাই যদি অন্যান্য মাছ না পেলে খালি হাতেই ফিরে আসতে হত আমাদের। এ বছর সাগরে নামার পর থেকে ইলিশের তেমন কোনো দেখা নাই। এরপর কিছুদিন পর পর নিম্নচাপ। আবার কয়েকদিন পরই ২২ দিনের অবরোধ( নিষেধাজ্ঞা) এভাবে চলতে থাকলে কীভাবে চলবে আমাদের জীবন।
ফিশারিজ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন জানান, এবার জেলেদের ভাগ্য সহায় হচ্ছে না। সাগরে বার বার বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা। তবে শেষ দিকে কাঙ্খিত ইলিশ তাদের জালে ধরা পড়তে পারে।
এ বিষয় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ফিশারিজ ও মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, 'আমাদের দেশের উপকূলীয় বড় একটা অংশের মানুষ কিন্তু ইলিশের উপর জীবন যাপন করে। দেখা যাচ্ছে বিগত বছরেগুলোতে কিন্তু আমাদের দেশে ইলিশ পরিমানে কমে যাচ্ছে। উপকূলীয় মানুষের যে দূর দশা তা কিন্তু কিছু মানুষের জন্য। কারণ উপকূলীয় যে পরিমান অবৈধ জাল রয়েছে বিভিন্ন নামে যেমন,চরঘেরা, বেহুন্দিসহ নানা নামে কিন্তু এ জালগুলো উপকূলকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছে। ইলিশকে কোনোভাবে আসতে দেওয়া যাচ্ছেনা। এভাবে যদি চলতে থাকে যে মানুষগুলোর জীবন-যাপন শুধু ইলিশের উপর তাদের কিন্তু জীবন হুমকের মুখে পরে যাবে। সুতরাং এখন যে খারাপ অবস্থা যত দ্রুত সম্ভব এই যে অবৈধ জাল আছে। তা প্রসাশনের দ্রুত অপসারণ করতে হবে। এই জাল কোনোভাবেই থাকতে দেওয়া যাবে নাহ। তানাহলে বড় একটা অংশের মানুষ কিন্তু জীবন জীবিকার ঝুঁকিতে পরবে। এছাড়াও এখন জ্বালানি তেল রসদসহ যাবতীয় খরচ মিটিয়ে জেলেরা সমুদ্র যাত্রা করে। কিন্তু একের পর এক বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠা সাগর থেকে জেলেদের তীরে ফিরতে হয়েছে। যার কারণে ঠিকমত মাছ ধরতে না পেরে ফিরে আসার কারণে জেলেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। '
উল্লেখ্য,সামনে আসছে নিষেধাজ্ঞা।ইলিশ শিকারের সময় ফুড়িয়ে আসছে। মা ইলিশ রক্ষায় আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে।