মতামত

সন্তানের প্রতি যত্নবান হোন

আল আমিন
১২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৫ দুপুর

অনেক পরামর্শ, নানা কার্যক্রম চলছে। শিশু অধিকার নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তবে আমরা নিজেরা কি এসব মান্য করছি? যেমন ব্যস্ততম অভিভাবক শ্রেণির কথাই বলি-নিজেদের ক্যারিয়ারের পেছনে সময় দিতে গিয়ে আমরা ভুলে যাই ঘরের শিশুর প্রাপ্য অধিকারের কথা। আমাদের কাছ থেকে দূরে রাখার জন্য হাতে তুলে দিচ্ছি নীরব ঘাতক স্মর্ট ফোন। স্মার্ট ফোন ব্যবহারে প্রাপ্তবয়স্কের চেয়ে শিশুরা অনেক বেশি পারদর্শী। তার কিছুটা কৃতিত্ব রয়েছে কিন্তু বড়দেরই! শিশুর বায়না সামলাতে অথবা এক জায়গায় বসিয়ে রাখতে কি তুলে দিচ্ছেন আপনার স্মার্ট ফোন? আর তা ঘাঁটতে ঘাঁটতেই শিশু শিখে যাচ্ছে খুঁটিনাটি? আমার ছেলেমেয়েরা স্মার্ট ফোনের সবকিছু জানে-বলে গর্ব করলেও আপনি জানেন কি আপনার এ স্বভাবই মারাত্মক ক্ষতি করছে আপনার শিশুর!

 

বিশেষজ্ঞরা বলেন,স্মার্টফোনের টাচ স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে মারাত্মক প্রভাব পড়ে আপনার শিশুর ওপর। এমনকি ভবিষ্যতে কলম বা পেনসিল ধরতে সমস্যা হতে পারে। চোখে কম দেখতে পারে। অফিসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে বলেন, আমার ছেলে অথবা মেয়ে মোবাইলে খুব পাকা। নিজে নিজে ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন প্রকার অ্যাপস ডাউনলোড করা। এটা ওটা বের করা সব পারে। সহকর্মীরা উৎসাহ দেয়- বাহ,আপনার ছেলেমেয়ে সব পারে অনেক মেধাবী। আপনি আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন। আপনার ছেলেমেয়েরা একেবারেই খেতে চায় না। প্রতিবেশীদের দেখাদেখি আপনিও সন্তানদের খাওয়ানোর সময় মোবাইল ফোন দেন। তারা ইউটিউবে গান শুনতে ও কার্টুন দেখতে দেখতে খায়। বাহ বিনা ঝামেলায় সন্তানদের পেটভরে খাওয়ানো হলো।

এভাবেই মা-বাবারা সন্তানের দাবি মেটাতে হাতে তুলে দিচ্ছি স্মার্ট ফোনসহ দামি সব গেটেজ। এতে করে বাবা-মায়েরা যেমন নিশ্চিন্ত হচ্ছে অন্যদিকে তারা এটাকে আভিজাত্যের অংশ মনে করছে। মোবাইল ফোন হাতে পেলে খুশির যেন কমতি নেই। এতে করে মনোযোগ হারায় লেখাপড়া থেকে। অন্যদিকে মায়েরাও ঝুঁকছে স্মার্ট ফোনের দিকে খেয়াল হারাচ্ছে ছেলেমেয়েদের প্রতি। ফলে শিশুরা মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিশেষ করে গ্রামের ছেলেমেয়েরা পুকুরে-ডোবায় ডুবে মারা যায়। তাই এখনই সময় আমাদের সচেতন হওয়ার। তা না হলে সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ কালো অধ্যায়।

আমরা নিজেদের মনের অজান্তে শিশুদের আগামী ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছি। শিশুটি যখন সারাদিন একাকিত্বে ভোগে, শিশুটি যখন মানসিকভাবে দুর্বল ও অসহায় হয়ে যাচ্ছে তখন আমরা কেবল দোষ চাপিয়ে দিই উগ্র সংস্কৃতি ও রাজনীতিবিদের ওপর। শিশুর কথা মনে রাখুন। তাকে আলাদা সময় দিন। বেড়াতে নিয়ে যান। তার সঙ্গে গল্প করুন। আপনি যদি শিশুর প্রতি যত্ন নেন,তাহলে সেও সামাজিক দায় বোধ অনুভব করবে। তাকে প্রয়োজনীয় সময় দিলে সে অন্য দিকে যাবে না। বাজে আদর্শে উদ্বুদ্ধ হবে না। প্রযুক্তির খারাপ দিকে আসক্ত হবে না। অন্য কিছু ভাববে না। কিশোর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে না। তাই আসুন অভিভাবক সমাজ আমাদের সন্তানদের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হই। যাতে করে সব শিশু ভবিষ্যতের কর্ণধার হয়ে ওঠে। ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আজকের শিশুরা যেন প্রকৃত মানুষ হতে পারে।