প্রধান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২ নং ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন। রক্ষণাবেক্ষণ শেষে ইউনিটটি চালু হলে পুরোদমে উৎপাদনে ফিরবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় মন্ত্রনালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে এই সময়টিকে বেছে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না বলে জানালেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিনাঞ্চলের প্রথম কয়লা ভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পায়রা বানিজ্যিক ভাবে পুরোদমে উৎপাদনে আসে ২০২০ সালে। বিদ্যুৎখাতে নানা টানাপোড়েন ও দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি না হয় সে কারনে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটই বিরতিহীন ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল। তবে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সকল যন্ত্রেরই বিরাম, ছোটখাট মেরামতসহ রক্ষনাবেক্ষন দরকার হয়। না হলে এগুলো কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু দেশের চাহিদার বিষয় বিবেচনায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটই উৎপাদন অব্যহত রাখায় বর্তমানে এর প্রধান রক্ষণাবেক্ষণ জরুরী হয়ে পড়ে। তাই মন্ত্রনালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে গত ১০ নভেম্বর গভীর রাত থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২য় ইউনিট বন্ধ করা হয়। এটির রক্ষণাবেক্ষণে অন্তত ২ মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ম ইউনিটের মাধ্যমে উৎপাদিত ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যোগ হচ্ছে। এর আগে গত জানুয়ারী মাসে ১ম ইউনিটের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয়।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জোবায়ের আহমেদ বলেন, আমরা আশা করছি আগামী দুই মাসের ভিতর যাবতীয় মেনটেনেন্সের যে কার্যক্রম গুলো রয়েছে সেগুলো শেষ করে এই বন্ধ ইউনিটটি উৎপাদনে ফিরে আসবে। আমাদের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হলেও বাংলাদেশে আরো পাঁচটি কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে এবং গ্যাস এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আশা করি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর চাহিদা গুলো মিটাপ করতে পারবে। যেহেতু শীত পড়ে গেছে সেহেতু বিদ্যুতের ডিমান্ড অনেক কমে গেছে।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যাবস্থাপক,প্রকৌশলী শাহ আব্দুল মওলা জানান, জরুরি প্রধান মেরামতের প্রয়োজনে মন্ত্রনালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় এই সময়টিকে বেছে নেয়া হয়েছে এরপরেও ঘাটতি দেখা দিলে অন্যান্য কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে তা পুরন করা হবে। এছাড়া চীনের সাথে চুক্তির মধ্যেই এ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করার কারনে বাড়তি কোন খরচ হবেনা।
২০১৪ সালে বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সাল থেকে এটি উৎপাদনে যায়। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।